
পেরিস্কোপ হলো এমন একটি যন্ত্র, যা দৃষ্টির আড়ালে থাকা লক্ষ্য বস্তুকে দেখতে সাহায্য করে। যন্ত্রটি সাধারণত ব্যবহৃত হয় স্থল এবং জল যুদ্ধে। ডুবোজাহাজে এর ব্যবহার অপরিহার্য। এসব ক্ষেত্রে এটি চর্মে বা আচ্ছাদনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পর্যবেক্ষককে তার চারপাশের অবস্থা দেখতে এবং ডুবোজাহাজের নাবিকদের জলতলে থাকার সময় উপরিভাগের দৃশ্য দেখতে সাহায্য করে। দুটি সমান্তরাল আয়না থেকে আলোর প্রতিফলনের পদ্ধতিটি নির্ভর করে পেরিস্কোপ যন্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে। এটি সমকোণে দুবার বাঁকানো একটি লম্বা টিউব বা নল দিয়ে তৈরি। উপর এবং নিচের বাঁকানো অংশে দুটি আয়না পরস্পর সমান্তরালে স্থাপন করা হয়েছে। আয়না দুটির প্রতিফলন 'তল' এমনভাবে সংস্থাপিত যাতে টিউবটির অক্ষের সঙ্গে তা ৪৫ ডিগ্রি কোণ সৃষ্টি করতে পারে। পেরিস্কোপের সামনের কোণ বস্তু থেকে আলোক রশ্মি এসে পরপর দুটি আয়নায় দুটি প্রতিফলন ঘটিয়ে পর্যবেক্ষকের চোখে এসে ধরা পড়ে। কোনো কোনো পেরিস্কোপে দূরের লক্ষ্যবস্তুকে কাছে বা বড় করে দেখানোর জন্য আয়নার পরিবর্তে প্রতিফলক প্রিজম ব্যবহার করা হয় এবং বিবর্ধক কাচ যুক্ত করা হয়। এগুলোতে আবার লক্ষ্যবস্তুর দূরত্ব নির্ণয়ক যন্ত্রটিও যুক্ত থাকে। এই জাতীয় পেরিস্কোপ লক্ষ্যবস্তুর ফটোগ্রাফও তুলতে সাহায্য করে। ডুবোজাহাজে এবং ট্যাঙ্কে পেরিস্কোপের ব্যবহার অপরিহার্য। এই পেরিস্কোপের সাহায্যে সামরিক অফিসাররা পানির তলায় ডুবে থাকা সাবমেরিন থেকে পানির উপরিভাগের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। লোহার বর্মাচ্ছাদিত ট্যাঙ্কের অভ্যন্তর থেকে সেনাধ্যক্ষ পেরিস্কোপের সাহায্যে যুদ্ধ ক্ষেত্রের অবস্থা দেখতে পান। কার্ড বোর্ডে প্রস্তুত পেরিস্কোপ প্যারেড, খেলাধুলা-প্রদর্শনীর দর্শকদের কাছে খুব জনপ্রিয়। অত্যধিক ভিড়ে মানুষের মাথার ওপর দিয়ে এর সাহায্যে খেলা দেখা যায়। আণবিক বিক্রিয়া, বিশেষ ধরনের অগি্ন চুলি্লর অভ্যন্তর ভাগ অথবা অন্যান্য বিপজ্জনক যন্ত্রাদি পর্যবেক্ষণের কাজে এটির সাহায্য নেওয়া হয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেরিস্কোপের মাপ হলো ২৭ মিটার। এটি রয়েছে ইদাহো-এর ইদাহো ফলসে অবস্থিত ন্যাশনাল রিয়েক্টর ট্রেস্টিংয়ের পর্যবেক্ষণাগারে। আণবিক রিয়েক্টরের কাজের পর্যবেক্ষণের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।
শামীম রহমান রিজভী
0 comments