চ্যাপ্টার ১
একেবারে প্রাথমিক কথা প্রথমেই শুরু করা যাক। আমি শুরু করতে চাই এক্সপোজার নিয়ে। আপনারা যারা ক্যামেরা ব্যবহার করেন তারা নিশ্চই ছবি তোলার সময় একটি ক্লিক শব্দ শুনে থাকবেন। এটি শাটারের শব্দ, যেটি হয় ক্যামেরার ভেতরে থাকা একটি আয়নায় ওঠানামার কারনে। যার কারনে ক্যামেরার ইমেজ সেন্সরে আলো যেতে পারে (যদি পুরোনো ফিল্ম ক্যামেরার কথা বলেন তাহলে সেন্সরের জায়গায় ফিল্ম শব্দটি পড়ে নিন।)
এক্সপোজার হলো ইমেজ সেন্সরের উপরে আলো পড়ার ফলাফল। এটি হয় কারন সেন্সরটিকে আলোর সামনে উন্মুক্ত করে রাখা হচ্ছে। খুবই সাধারন কথা, একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে এক্সপোজড হবার কারনেই এক্সপোজার। মাফ করবেন ইংরেজী ব্যবহারের কারনে। তো, সেন্সর (কিংবা ফিল্ম) যখন আলোতে উন্মুক্ত (এক্সপোজড) হয় তখন এটি আলো সংকেত সংগ্রহ করতে শুরু করে এবং কতটুকু আলোক সংকেত সংগ্রহ করতে পারলো তার উপর ভিত্তি করে একটি ছবি তৈরী হয়।
এখন কতখানি এক্সপোজার হবে এই ব্যাপারটি আপেক্ষিক। এজন্য যে এটি নির্ভর করে এপার্চার বা ‘এফ স্টপ’ এর উপরে। আরো সহজে বলতে গেলে বলা যায় লেন্সের ভেতর দিয়ে কতখানি আলো ঢুকবে তার উপরে। আপনি এপার্চার এর মান কমিয়ে বা বাড়িয়ে এই পরিমান নিয়ন্ত্রন করতে পারেন। এবার আরো একটু ভেতরে যাওয়া যাক।
সেন্সর কিংবা ফিল্ম কতটুকু এক্সপোজ হবে এটি নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের উপরে। সাটার স্পিড, এপার্চার এবং আইএসও (ISO)। এগুলোর প্রতিটিই আপনার তোলা ছবির বিভিন্ন দিক নিয়ন্ত্রন করে আর একই সাথে নিয়ন্ত্রন করে আপনার তোলা ছবির এক্সপোজারকেও। আপনি যদি এগুলোর একটিকে এক মাত্রায় বাড়িয়ে দেন তাহলে অন্য গুলিকেও সেই মাত্রায় কমাতে হবে।
একটি সহজ উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ধরুন আপনি কম আইএসও (ISO) থেকে বেশী আইএসও (ISO) ব্যবহার করা শুরু করলেন, সেক্ষেত্রে এক্সপোজার ঠিক রাখার জন্য আপনাকে এপার্চারের পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে (কম আলো প্রবেশের জন্য) অথবা শাটার স্পিডের সময় কমিয়ে আলো নিয়ন্ত্রন করতে হবে। ধরুন একটি ছবি ১০০ আইএসও (ISO) ব্যবহার করে, ৫.৬ এপার্চারে ১ সেকেন্ডে একটি ছবি তুলতে পারেন। এখন আপনি ওই একই ৫.৬ এপার্চার ব্যবহার করে ১০০ আইএসও (ISO) বাদ দিয়ে ২০০ আইএসও (ISO) ব্যবহার করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে শাটার স্পিড ১ সেকেন্ড থেকে কমিয়ে ১/২ সেকেন্ড করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার ছবি একই এক্সপোজার পাবে।
আমরা এখানে স্কুলে করা চৌবাচ্চার অংকের কথা মনে করতে পারি। ধরুন একটি পাইপ আলো চৌবাচ্ছা সেন্সরে পড়ছে পুরন করছে। পাইপের আকার (অর্থাৎ সেটি কতটা মোটা) হলো এপার্চার- এটি যত মোটা হবে সেটি তত বেশী পানি বয়ে আনতে পারবে। এখানে শাটার স্পিড হলো কতটা সময় ধরে আপনি পানি ছেড়ে রাখবেন সেটি। যদি আপনি সময় অর্ধেক করে দেন তাহলে অর্ধেক চৌবাচ্চা পুরন হবে। আর আইএসও (ISO)’র ব্যাপারটিকে আমরা দেখতে পারি পাইপে পানির চাপ কতটা এই হিসেবে। বেশী চাপ আইএসও (ISO) মানে বেশী আলো পানি।
এখন অংক খুবই সহজ। আপনি যদি চৌবাচ্চায় সব সময় একই পরিমান পানি দিতে চান তাহলে এই তিনটি বিষয়কে যেমন হিসেব করতে হবে সঠিক ছবি তোলার জন্যও একই ধরনের হিসেব করতে হবে।
এবার এক নজরে দেখা যাক কি শেখা গেল
এপার্চার (পাইপের আকার): ইমের সেন্সর (ফিল্ম) এর উপরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে কি পরিমান আলো পড়বে সেটি নিয়ন্ত্রন করে। এটি ছবির ডেপথ অব ফিল্ড (পরে এক সময় আলোচনা করা হবে) এবং ছবি কতটা শার্প হবে সেটিও এর উপর নির্ভর করে।
শাটার স্পিড (কতটা সময় ধরে পানি যাবে): সেন্সরে (ফিল্মে) কতটা সময় ধরে আলো পড়বে সেটি নিয়ন্ত্রন করে। একই সাথে লং ফোকাল লেন্থ এর ক্ষেত্রে ছবির শার্পনেসও এর উপর নির্ভর করে।
আইএসও (ISO): সেন্সর (ফিল্ম) আলোর উপরে কতটা সংবেদনশীল হবে। একই সাথে ছবিতে নয়েজ এবং গ্রেইন (অনেক সময় ছবিতে ছোট ছোট রঙ্গিন বুটি দেখা যায়) কতটা হবে সেটিও নির্ভর করে আইএসও (ISO)’র উপরেই।
এই লেখাটি ফেইসবুক গ্রুপ 'Amateur Photography' তে আগেই পোষ্ট করেছিলাম। এখানে কপি করলাম। আগামীতে আস্তে আস্তে আরো লিখতে চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ।
চ্যাপ্টার ২
২. আইএসও কি?
সাবেকী ফটোগ্রাফীতে আইএসও (অথবা ‘আশা’) বলতে বোঝায়, আপনার ফিল্ম কতটা আলোক সংবেদী। মানে আলোর প্রতি ফিল্মটি কতটা সংবেদন দেখাবে। কতগুলো নম্বর দিয়ে আইএসও প্রকাশ করা হয়ে থাকে। আপনি হয়তোবা ফিল্মে ১০০, ২০০, ৪০০ এমন নম্বর লেখা দেখে থাকবেন। নম্বর যত কম হবে ফিল্মটির আলোক সংবেদনশীলতা ততই কম হবে। একই সাথে ওই ফিল্ম দিয়ে আপনার তোলা ছবিতে গ্রেইন ততই কম হবে। বেশি আইএসও দিয়ে তোলা ছবিতে ভালো করে খেয়াল করলে দেবেন, বিভিন্ন রং এর ছোট ছোট ডট দেখা যায়, সেগুলোই গ্রেইন।
ডিজিটাল ফটোগ্রাফিতে ইমেজ সেন্সরের আলোক সংবেদনশীলতাকে আইএসও দিয়ে প্রকাশ করা হয়। মুল ঘটনা এখানে একই। আইএসও যত কম হবে আপনার ডিজিটাল ক্যামেরার সেন্সরের আলোক সংবেদনশীলতা ততই কম হবে। একই সাথে ছবিতে গ্রেইন তত কম হবে।
সাধারনত আলো কম এমন জায়গাতেই বেশী আইএসও ব্যবহার করা উচিত। যেমন, আপনি ইনডোর গেমস এর ছবি তুলতে গিয়ে বেশী সাটার স্পীড ব্যবহার করে ছবি তুলতে চাইলে আপনাকে আইএসও বেশী দিতে হবে। সেক্ষত্রেই ছবিটায় মোশোন ব্লারনেস ঘটবে না।(অনেক সময় ছবি তুলতে গেলে দেখবেন সবকিছু লেপ্টে গিয়েছে)। তবে এক্ষেত্রে মুল্য হিসেবে আপনাকে ছবিতে কিছু গ্রেইন মেনে নিতে হবে। (অনেক সময় গ্রেইন থাকা ছবিও অসাধারন হয়ে ওঠে। সময় সুযোগ পেলে এক সময় ব্যাপারটি আলোচনা করবো আমরা।)
সাধারনত ছবি তোলার ক্ষেত্রে ১০০ আইএসওকে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ধরা হয়। ঠিকমতো তুলতে পারলে চমৎকার ক্রিস্পি একটি ছবি পাবেন আপনি।
সাধারন ডিজিটাল ক্যামেরার ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ অটো মোড সিলেক্ট করে রাখেন। যেখানে ক্যামেরাই ঠিক করে নেয় সঠিক এক্সপোজার এবং মোশন ব্লারনেস কাটিয়ে উঠতে ঠিক কত আইএসও ব্যবহার করা হবে। এটা নির্ভর করে আপনি কোন পরিবেশে ছবি তুলতো চাইছেন। অটো মোড-এ ক্যামেরা চেষ্টা করে আইএসও কে যথাসম্ভব কম রাখতে। তবে একই সাথে অধিকাংশ সাধারন ডিজিটাল ক্যামেরা মেনুয়ালী আইএসও ঠিক করার সুযোগ দেয়।
যখন আপনি এই সুযোগটি নিয়ে নিজের মতো করে আইএসও ঠিক করে নেবেন, তখন খেয়ার করলে দেখবেন যে ক্যামেরা এবার শাটার স্পীড এবং এপার্চার কমবেশি করে পরিস্কার ছবি তুলতে চেষ্টা করছে। যেমন, আপনি যদি কোথাও আইএসও সেটিংস করতে গিয়ে ১০০ থেকে ৪০০ তে বৃদ্ধি করেন, তাহলে ক্যামেরায় ছবি তোলার ক্ষেত্রে আপনি বেশী শাটার স্পীড ব্যবহার করতে পারছেন অথবা আরো ছোট এপার্চার ব্যবহার করতে পারছেন। (নোট: ছোট এপার্চার মানে বেশী নম্বরের ৮ এর বেশী এপার্চার।)
আপনি যখন আইএসও ঠিক করবেন, নিজেকে চারটি প্রশ্ন জিজ্ঞেসা করুন।
১. লাইট: আপনার সাবজেক্ট কি সঠিক ভাবে আলোকিত?
২. গ্রেইন: আপনি কি গ্রেইন ওয়ালা ছবি চান নাকি কোন গ্রেইন ছাড়া ছবি চান?
৩. ট্রাইপড: আপনি কি কোন ট্রাইপড ব্যবহার করছেন?
৪. মুভিং সাবজেক্ট: আপনি যে ছবিটি তুলছেন সেটি কি চলমান কোন সাবজেক্ট?
যেখানে ছবি তুলছেন, সেখানে যদি প্রচুর লাইট থাকে, আপনি যদি কম গ্রেইন চান এবং ট্রাইপড ব্যবহার করেন এবং সাবজেক্ট যদি নড়াচড়া না করে, যেমন এটি যদি একটি বিল্ডিং এর ছবি হয়, সহজেই আপনি কম আইএসও ব্যবহার করতে পারেন।
আবার যদি এলাকাটি অন্ধকার হয়, আপনি যদি ছবিতে গ্রেইন চান আপনার যদি কোন ট্রাইপড না থাকে/অথবা আপনার সাবজেক্ট যদি মুভিং সাবজেক্ট হয় তাহলে আইএসও বেশী নেওয়ার কথা চিন্তা করতে পারেন। কারন বেশী আইএসও মানে আপনি বেশী শাটার স্পীডে ছবি তুলতে পারছেন এবং ছবির এক্সপোজার ভালো হবে। এখানে মনে রাখতে হবে, আপনি ছবিতে গ্রেইন বেশী পাবেন।
যে সমস্ত ক্ষেত্রে আপনার বেশী আইএসও দরকার হবে:
১. ইনডোর ইভেন্ট: যেখানে আপনার সাবজেক্ট হয়তো দৌড়াচ্ছে এবং আপনি ফ্ল্যাশ ব্যবহার করতে পারছেন না আবার ঘরে আলোও কম।
২. কনসার্ট: কনসার্টের মতো জায়গাগুলোতেও অনেক সময় ফ্ল্যাশ দেওয়া বারন থাকে।
৩. আর্ট গ্যালারী/ধর্মীয় উপাসনালয়: একই ভাবে অনেক আর্ট গ্যালারী ফ্ল্যাশ ব্যবহার করতে মানা করে। আবার কোন ক্ষেত্রে কাঁচের আবরন থাকে বলে সরাসরি ফ্ল্যাশ ব্যবহার করা যায় না। আর ধর্মীয় জায়গাগুলোর কথা বলাই বাহুল্য।
৪. জন্মদিনের পার্টি: এমন জায়গায় মোমের আলোতে ছবি তোলার সুযোগ নিশ্চই আপনি হারাতে চান না। সেরকম ছবি তুলতে হলে, বেশী আলোই প্রধান সমস্যা। এখানে আপনাকে বেশী আইএসও বাচিয়ে দেবে।
ডিজিটাল ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে আইএসও খুবই গুরুত্বপুর্ন একটি ব্যাপার। আগের ফিল্ম ফটোগ্রাফিতে একটি নির্দিষ্ট আইএসওই ব্যবহারের সুযোগ ছিলো। কিন্তু ডিজিটাল ফটোগ্রাফিতে যেহেতু আপনার বিভিন্ন আইএসও ব্যবহারের সুযোগ আছে সেক্ষেত্রে একে সুন্দর ভাবে আপনি ব্যবহার করতে পারেন। আর এক্ষেত্রটিকে আপনি বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করতে পারেন।
৩: শাটার স্পিড
শাটার স্পিড কি: আগের পোষ্টগুলো পড়ে থাকলে হয়তো দেখে থাকবেন শাটার স্পিড হলো মুলত – সেই সময়কে নির্দেশ করে যেটি দিয়ে আপনি বুঝতে পারবেন কতটা সময় ধরে ক্যামেরার শাটার খোলা রয়েছে।
ফিল্ম ফটোগ্রাফিতে এই ব্যাপারটি দিয়ে বোঝানো হয়, আপনার ক্যামেরায় ভরা ফিল্মটিতে কতটা সময় ধরে আলো পড়বে সে ব্যাপারটি। একইভাবে ডিজিটাল ফটোগ্রাফিতে শাটার স্পিড হলো আপনার ডিজিটাল ক্যামেরার সেন্সর কতটা সময় ধরে আলো গ্রহন করবে সেটি ঠিক করে দেওয়া।
এবারে শাটার স্পিডের কয়েকটি দিক নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
১. শাটার স্পিড সেকেন্ড মাপা হয় অথবা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এখানে সংখ্যাটি আপাত দৃষ্টিতে যতটা বড় শাটার স্পিডও ততই বেশী। যেমন ১/১০০০ শাটার স্পিড অবশ্যই ১/৩০ এর চাইতে বেশী। প্যাচ না লাগলে আরো একটু বলে নেই, ১/৩০ শাটার স্পিডে ক্যামেরার লেন্স দিয়ে সেন্সর/ ফিল্মে বেশী সময় ধরে আলো পড়বে।
২. অধিকাংশ সময়েই আপনি জেনে কিংবা না জেনে ১/৬০ সেকেন্ড কিংবা তার চাইতে বেশী মাপের শাটার স্পিড ব্যবহার করেন। কারন মুলত,এর চাইতে কম শাটার স্পীড ব্যবহার করা হলে কাপা কাপা কিছু ছবি ছাড়া সাধারনত তোলা যায় না। যখন আপনার ক্যামেরা হাতের কারনে নড়ছে কিংবা আপনার সাবজেক্ট নড়ছে তখন এর কম স্পীডে ছবি তোলা হলে ছবিটি ব্লার হয়ে যাবে।
৩. আপনার হাত খুব স্টেডি না হলে, সাধারনত হয় না, ১/৬০ শাটার স্পীডের নিচে ছবি তুলতে হলে ট্রাইপড ব্যবহার করতে হবে অথবা ক্যামেরার যদি ইমেজ স্টাবিলাইজেশন থাকে সেটি ব্যবহার করতে হবে। সাধারনত অধিকাংশ আধুনিক ক্যামেরায় ব্যাপারটি থাকে।
৪. সাধারনত ছবি তোলার ক্ষেত্রে শাটার স্পিড সেটিংস একটি আরেকটির মোটামুটি দ্বিগুন হয়। যেমন ১/৩০ এর বেশি ১/৬০ থাকে সাধারনত। একই ভাবে সাধারনত দেখবেন আপনার ক্যামেরায় ১/৮, ১/১৫, ১/৩০, ১/৬০, ১/১২৫, ১/২৫০, ১/৫০০ এভাবে সেটিংস গুলো পাবেন।
৫. কিছু কিছু ক্যামেরা আপনাকে খুবই স্লো শাটার স্পিড ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। যেমন ১ সেকেন্ড, ১০ সেকেন্ড, ৩০ সেকেন্ড। কিছু ক্যামেরায় B নামের একটি মোড থাকে যাকে Bulb ও বলা হয়ে থাকে। সেখানে আপনি যতটা সময় শাটার চেপে ধরে রাখবেন ততটা সময়ই শাটার খোলা থাকবে।
৬. ছবি তোলার সময় ঠিক কতটা শাটার স্পিড আপনি ব্যবহার করবেন এটি নির্দিষ্ট করতে প্রথমেই দেখুন আপনার ফ্রেমে কোন মুভিং অবজেক্ট আছে কি না? আপনি কিভাবে সেই মুভিং অবজেক্ট/সাবজেক্ট টি ছবিতে চান। মানে আপনি হয়তো চাইলেন যে মুভমেন্ট টা স্থির করে ছবি তুলতে, কিংবা চাইতে পারেন মোশন ব্লারনেস থাকুক একটু। ধরুন একটি চলন্ত ট্রেনের সামনে কারো ছবি তুলতে চাইছেন। সেক্ষেত্রে আপনি চাইতে পারেন, ট্রেনটির ছবিতে আপনি মোশন ব্লারনেস চাইছেন কিন্তু মানুষটিকে আপনি চান ফ্রিজ অবস্থায়। যাতে করেত ট্রেনটি চলছে সেই অনুভুতি দেওয়া যায়। এমন ক্ষেত্রে অবশ্যই শাটার স্পিড কমের দিকেই থাকতে হবে।
যদি কোন ক্ষেত্রে মোশন ব্লারনেস না চান, যেমন আপনি হয়তোবা খেলার ছবি তুলছেন, ক্রিকেটের বল ব্যাটসম্যানের সামনে স্থির থাকুক এমনটা চাইছেন আপনি। যাই হোক না কেন, কতটুকু মোশন ব্লারনেস চাইছেন আপনি সে অনুযায় আপনাকে শাটার স্পিড ঠিক করতে হবে। এখানে বলা সম্ভব না যে ওই খেলায় এই শাটার স্পিড ব্যবহার করলেই হবে। এটি আপনাকেই ছবি তুলে আন্দাজ করে নিতে হবে।
তবে সব সময়টি যে ঝক ঝকে ছবি পেতে হবে, ছবিতে সবকিছু স্থির থাকেতেই হবে এমন নয়। কখনো কখনো মোশন ব্লারনেসও ছবিকে সুন্দর করতে পারে। যেমন ঝরনার ছবি তুলতে হলে মোশন ব্লারই ভরসা। নাহলে ছবি ভালো নাও লাগতে পারে।
৭. শাটার স্পিড কত হবে সেটি ঠিক করতে আরেকটি ব্যাপার দরকারী, সেটি হলো আপনি লেন্সের ফোকাল লেন্থ কতটা ব্যবহার করছেন। কারন ফোকাল লেন্থ বেশি হলে সেটির একটি প্রভাব পড়বেই। এজন্য ত্রিকোনমিতি জানলে ভালো বুঝতে পারবেন। একটু সহজ করে বললে, আপনার ক্যামেরার পুরো জুম করে দেখুন হাত স্থির রাখতে কি পরিমান কষ্ট। ছবি দেখবেন ফ্রেমে থাকেই চাইছে না। আবার পুরো জুম আউট করুন, দেখুন ওই একই ফ্রেমে আপনার হাত কত স্থির। যাই হোক, বেশী জুমে হাত স্থির রাখতে আপনাকে বেশি শাটার স্পিড ব্যবহার করতেই হবে। যেমন আপনি যদি ৫০ মিমি ফোকাল লেন্থ ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে আপনার হয়তো ১/৬০ শাটার স্পিডেই হয়ে যাবে। কিন্তু একই জায়গায় আপনি ২০০ মিমি ফোকাল লেন্থ ব্যবহার করে ছবি তুলতে চাইলে হয়তো ১/২৫০ শাটার স্পিড ব্যবহার করতে হবে।
আর আপনার ক্যামেরায় যদি ইমেজ স্টাবিলাইজেশন থাকে তাহলে একটু কম শাটার স্পিডেই আপনি একই রেজাল্ট পাবেন।
শাটার স্পিডের সাথে আইএসও এবং এপার্চারের কিন্তু যোগসুত্র আছে। বাকি দুটোকে ছাড়া কিন্তু আপনি ঠিক ছবি তুলতে পারবেন না। ভালো ছবি তুলতে হলে, তিনটি বিষয়কেই একসাথে ভাবতে হবে আপনাকে। একটি পরিবর্তন করলে এক্সপোজার ঠিক রাখতে অন্য একটি এবং কোন কোন ক্ষেত্রে দুটিকেই পরিবর্তন করতে হবে আপনাকে।
একটি উদাহরন দেই: আপনি যদি শাটার স্পিড বাড়িয়ে ছবি তুলতে চান, ধরুন ১/১২৫ থেকে বাড়িয়ে ১/২৫০ করেন, তাহলে আপনি আসলে ক্যামেরায় আলো প্রবেশের সময় অর্ধেক করে দিলেন, মানে গিয়ে দাঁড়ালো আপনার ক্যামেরায় অর্ধেক আলো পৌছালো। এখন সেই সময়ে কাংখিত এক্সপোজার পেতে হলে ক্যামেরার এপার্চার বাড়িয়ে নিতে হবে, জানালা একটু বেশি খোলা হলে একটু বেশি আলো প্রবেশ করতে পারবে। সময় কমিয়ে কম আলো ঢোকার যে ব্যবস্থা আপনি করেছেন সেটিকেই কমপেনসেট করতে জানালা একটু বেশি খুলে নিচ্ছেন আপনি। একই কাজ আপনি করতে পারেন একটু বেশি আইএসও সেট করে। যেমন ১০০ র জায়গায় ২০০ আইএসও। সবগুলোই একটির সাথে আরেকটি সম্পর্কিত।
৪. এপার্চার
এপার্চার বিষয়টিকে রপ্ত করতে পারলে আপনি আপনার তোলা ছবিগুলোতে ক্রিয়েটিভ হওয়ার সুযোগ পাবেন। এখানেই লুকিয়ে আছে ফটোগ্রাফির ম্যাজিক।
এপার্চার কি? সহজ কথায় এপার্চার হলো ছবি তোলার সময় লেন্স কতখানি খোলা রয়েছে সেটি। আপনি যখন ক্যামেরার শাটার রিলিজ বোতামে চাপ দিচ্ছেন, সেটি ক্যামেরার লেন্স/ ফিল্মের সামনে একটি ছোট্ট জানালা খুলে দেয়। তার কারনেই ক্যামেরার ভেতরে আলো প্রবেশ করতে পারে। এখানে এপার্চার হলো সেই জানালার আকার। জানালার আকার যত বড় হবে ততই বেশি আলো প্রবেশ করবে আর আকার যত ছোট ততই কম আলো প্রবেশ করবে।
সাধারনত এপার্চার মাপা হয় এফ-স্টপ দিয়ে। বেশিরভাগ সময় এগুলো এভাবে লেখা হয়, যেমন এফ/২.৮, এফ/৫.৬, এফ/৮, এফ/২২ এরকম। একটার থেকে আরেকটা এফ স্টপ-এ গেলে আলো হয় দ্বিগুন বৃদ্ধি পায় অথবা অর্ধেকে নেমে আসে। যেমনটা শাটার স্পিডের ক্ষেত্রেও আমি বলেছিলাম।
তাহলে একটু মনে রাখুন, শাটার স্পিড এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়ে যদি আপনি এপার্চার একধার কমিয়ে দেন তাহলে আসলে আপনি একই পরিমান আলো আপনার ক্যামেরার ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন।
নতুন ফটোগ্রাফাররা একটি বিষয়ে একটু ঝামেলায় পড়েন এই ভেবে যে এপারচারের নম্বর যত বড় হবে ততই বেশি আলো ক্যামেরায় প্রবেশ করবে। আসলে এপার্চারের ক্ষেত্রে নম্বর যত কম হবে সেটি তত বড় জানালা নির্দেশ করবে। একই ভাবে বড় নম্বরগুলিতে জানালার আকার ছোট হতে থাকবে। তার মানে হলো এফ/২.৮ আসলে কিন্তু এফ/২২ এর তুলনায় অনেক বড় জানালা বোঝায়। শোনাতে উল্টো মনে হলেও এটিই মনে রাখতে হবে বেশী করে।
ডেপথ অব ফিল্ড এবং এপার্চার: ছবি তোলার সময় এপার্চারে পরিবর্তানের কারনে ছবিতে বেশকিছু প্রভাব পরে। এর মাঝে যেটি আপনি মনে রাখতে হয়তো উৎসাহিত হবেন সেটি হলো ছবির ডেপথ অব ফিল্ডের পরিবর্তন।
সহজ কথায় ডেপথ অব ফিল্ড হলো আপনার তোলা ছবিতে যে জায়গাটি ফোকাসে থাকে। ডেপথ অব ফিল্ড বেশী হলে পুরো ছবিটাতে যা আছে সবই পরিস্কার দেখা যাবে। ধরুন একটি সিড়ির ২০ টি ধাপ আছে, আপনি এক মাথা থেকে ওই সিড়ির ছবি তুলেছেন। বেশি ডেপথ অব ফিল্ড হলে দেখবেন ক্যামেরার কাছের দিককার ধাপ থেকে শুরু করে সবকটি ধাপই পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। সহজ কথায় বলা যায় সাধারনত বড় নম্বরের এপার্চারে তোলা ছবির ডেপথ অব ফিল্ড বেশি হয়।
আবার ডেপথ অব ফিল্ড কম হলে দেখবেন, ছবির একটি অংশ পরিস্কার। আগে যে সিড়ির উদাহরনটি দিলাম, সেটি দিয়েই বোঝানো যায় ব্যাপারটি। ২০ টি সিড়ির মধ্যে যদি মাঝের দুটি পরিস্কার দেখা যায় আর সামনে পেছনে বাকি ধাপ গুলো ছবিতে ঝাপসা হয়ে আসে তাহলে ডেপথ অব ফিল্ড হলো ছবির পরিস্কার হয়ে আসা এক কিংবা দেড়ফুট ওই অংশটুকুই। সাধারনত কম নম্বরের এপার্চারে তোলা ছবির ডেপথ অব ফিল্ড কম হয়।
তারমানে হলো ডেপথ অব ফিল্ড এর উপরে এপার্চারের প্রভাব অনেক। এখানে লেন্সেরও প্রভাব আছে, সেটি নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করবো আশা করি। ছোট নম্বরের এপার্চার যেটিতে সবচেয়ে বড় জানালা থাকে সেখানে ডেপথ অব ফিল্ড কম হয়। আর বেশি নম্বরের এপার্চার যেখানে জানালা ছোট হয়, সেখানে আপনি ডেপথ অব ফিল্ড বেশি পাবেন।
ঝামেলা না করে সহজে বলি, ছোট এপার্চার নম্বর মানে ছোট ডেপথ অব ফিল্ড, বড় এপার্চার নম্বর মানে বড় ডেপথ অব ফিল্ড।
সবচেয়ে ভালো হয়, ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে দুর থেকে একটি ফুলের ছবি তোলার চেষ্টা করুন। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ফুলের ক্লোজ আপ ছবি তুলুন। প্রতিটি ছবি তোলার আগে এক ধাপ করে বড় এপার্চার দিন। ছবিগুলোর পার্থক্য নিজেই দেখুন। তাহলেই বুঝবেন এপার্চারের উপরে নিয়ন্ত্রন কতটা পার্থক্য এনে দিতে পারে ছবিতে।
কোথায় কেমন ডেপথ অব ফিল্ড: ধরুন আপনি দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ দেখাতে চাইছেন। যেখানে ক্যামেরার কাছের জিনিস থেকে শুরু করে দুরের আকাশ পর্যন্ত যা আছে তা পরিস্কার দেখাতে হবে। যাকে বলা হয় ল্যান্ডস্কেপ ফটো। এখানে ডেপথ অব ফিল্ড দরকার বড়। তাই বড় নম্বরের এপার্চার ব্যবহার করতে হবে এখানে।
অনদিকে কারো একক ছবি তুলতে চাইছেন। যাকে বলে, পোট্রেট ছবি। সেখানে আসলে কম ডেপথ অব ফিল্ড দরকার। একানে আরো দরকার আপনার সাবজেক্টের পরিস্কার ছবি এবং তার সামনে-পেছনে ব্লার। এমনটা চাইলে আপনার দরকার কম নম্বরের এপার্চার।
এছাড়াও ম্যাক্রো ছবি তোলার ক্ষেত্রে কম নম্বরের এপার্চার দরকার। কারন ম্যাক্রো ছবিতে মুল সাবজেক্টটিকেই সবার নজরে আসা প্রয়োজন। আর সাবজেক্ট ছাড়া বাকি সব কিছু থাকবে ব্লার বা আউট অব ফোকাস। সেক্ষেত্রে কম ডেপথ অব ফিল্ডই যুক্তিযুক্ত।
আশা করি এপার্চারের ব্যাপারটি বোঝাতে পেরেছি। এটি দিয়েই শেষ হচ্ছে এক্পোজার-এর প্রাথমিক পাঠ।
এক নজরে চারটি পাঠের আলোচ্য ছিলো
১. এক্সপোজারের প্রাথমিক পাঠ
২. আইএসও
৩. শাটার স্পিড
৪. এপার্চার
© russel.mahmud
0 comments