ফরেন্সিক সায়েন্সের সাহায্যে অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়। বস্তুত দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন সংক্রান্ত সমস্যাবলীর সমাধানের জন্য বিজ্ঞান টেকনোলজির ব্যবহারকে বলা হয় ফরেন্সিক সায়েন্স। ফরেন্সিক বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ব্যবহার করে থাকে। যেমন মেডিসিন, বায়োলজি, ক্যামেস্ট্রি, ফটোগ্রাফি ও ব্যালিস্পি। কোনো একটি বিশেষ অপরাধ কখন এবং কিভাবে ঘটেছিল তা নির্ণয়ের জন্য তারা পুলিশ এবং অন্যান্য অনুসন্ধান কার্যে নিয়োজিত সরকারি এজেন্সিসমূহের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা সহকারে তাদের কাজ করেন। অপরাধের ঘটনা স্থলে প্রাপ্ত প্রমাণকে তারা বিশ্লেষণ করেন এবং প্রায়ই তাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অনুসন্ধানের ফলে অপরাধীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। ফরেন্সিক সায়েন্সের গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলোর অন্যতম হলো ফরেন্সিক মেডিসিন। হিংস্র আক্রমণের ফলে মৃত্যু ঘটা বা আঘাত পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যখন কোনো ব্যক্তির অস্বাভাবিক কারণে মৃত্যু ঘটেছে বলে সন্দেহ হয় তখন ডাক্তার পুক্সখানুপুক্সখভাবে তার শরীর পরীক্ষা করেন। কতক্ষণ আগে সে ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে তা ডাক্তারকে নির্ণয় করতে হবে এবং তা নির্ণয়ের জন্য সর্বপ্রথম তিনি শরীরের উত্তাপ নির্ণয় করে তার হিসাব করেন। ডাক্তার জানেন যে, স্বাভাবিক অবস্থায় শরীর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শীতল হয়। এ ফর্মূলা অনুযায়ী তিনি মৃত্যুর আনুমানিক সময় নির্ধারণ করতে পারেন। যখন অনেকক্ষণ আগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সে ক্ষেত্রে তাদের অনেক জটিলতর পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। ফরেন্সিক ডাক্তারকে মৃত্যুর সঠিক কারণও নির্ণয় করতে হয়। যদি কোনো ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে মৃত্যু ঘটে থাকে তাহলে তারা সেই অস্ত্রের আয়তন ও আকৃতিও নির্ণয় করতে পারেন। ছোরা, ছোট কুঠার অথবা ভোঁতা অস্ত্রের আঘাত কিনা তাও তারা নির্ণয় করতে পারে। বন্দুকের গুলির আঘাত হলে ডাক্তার ব্যালিস্টিক এক্সপার্টদের সহযোগিতায় কাজ করেন এবং বুলেটের শক্তি ও আয়তন নির্ণয় করেন। শরীরের কোন দিকে বুলেটটি ঢুকেছে এবং কতটুকু দূরত্ব থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে তাও তারা বলতে পারেন। বন্দুকটি কাদের জন্য তৈরি তা জানার জন্য বুলেটগুলো মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করা হয়। যে সব গুলি ছোড়া হয় তার মধ্যে প্রায় সব রকম বন্দুকেরই নিজস্ব চিহ্ন থাকে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা অনেক রকম রাসায়নিক প্রক্রিয়া ও ব্যবহার করেন। মৃত বা আহত ব্যক্তির চামড়ায় রঞ্জক পদার্থের অতি সামান্য অংশ নিবদ্ধ থাকলেও তার থেকে আঘাত প্রদানকারী মোটরগাড়ি কোন সালের তৈরি, তার মডেল কি এবং তার প্রস্তুতকারক কারা এ সব সংবাদ সংগৃহীত হতে পারে। জালিয়াতির মামলায় তারা কাগজ ও কালি পরীক্ষা করে দেখেন। প্রায় অদৃশ্য অবস্থায় ওয়াটার মার্ক বলে পরিচিত যে ট্রেডমার্ক প্রায় সব কাগজেই থাকে তার থেকে বিজ্ঞানী ও গোয়েন্দারা কখন এবং কোথায় কাগজটি ক্রয় করা হয়েছিল তা নির্ণয় করতে পারেন। কালি বিশ্লেষণ করে কোথা থেকে ক্রয় করা হয়েছে তাও নির্ণয় করা যায়। কাপড়-চোপড় এবং অন্যান্য বস্তুর মধ্যে রক্তের চিহ্ন থাকে তা থেকে অপরাধীর সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়। ফরেন্সিক বিজ্ঞানীরা ব্লাডগ্রুপ নির্ণয় করেন। মৃত বা আহত ব্যক্তির শার্টের পকেটে প্রাপ্ত সামান্য ধুলোবালির টুকরো অথবা জুতোয় লেগে থাকা কাদা থেকে নির্ণয় করা যায় অপরাধটি কোন স্থানে ঘটেছিল। আঙ্গুলের ছাপ অপরাধী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। অনেক সময় অপরাধীদের আঙ্গুলের ছাপ ঘটনাস্থলের দরজায় হাতলে অথবা জলের গ্লাসে লেগে থাকে। আঙ্গুলের ছাপ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা একটি মসৃণ সাদা পাউডার তার উপর ছড়িয়ে দেন এবং তার ফলে আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠে। যেহেতু কোনো দুই ব্যক্তিরই আঙ্গুলের ছাপ এ রকম হয় না, অতএব এর সাহায্যে অপরাধীকে শনাক্ত করা যায়। অপরাধ সংক্রান্ত অনুসন্ধানে আর একটি পদ্ধতি হলো ফটোগ্রাফি। খালি চোখে যা দেখা যায় না, অনেক সময় ক্যামেরা সেসব বিস্তারিত বিবরণ ধরতে পারে। প্রমাণাদি পরীক্ষার জন্য ফরেন্সিক বিজ্ঞানীরা ইন্ফ্রারেড অথবা আল্ট্রা ভায়লেট লাইট এর এক্স-রে ইত্যাদিও ব্যবহার করেন।

প্রীতম সাহা সুদীপ

0 comments

Post a Comment